Tuesday, 5 May 2015

Aids


এইডস প্রতিরোধে করণীয় (দুই)

 

 এইডসের বীজানু সংক্রমিত হওয়ার আরেকটি বিপদজনক মাধ্যম হলো মাদক। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাদকের যে আগ্রাসন চলছে তাতে অন্য মাধ্যমগুলো বাদ দিলেও শুধুমাত্র মাদকের মাধ্যমেই এইডস মহামারী আকার ধারণ করতে পারে। মহাজ্ঞানী আল্লাহ তায়ালা তাই মাদককে নিষিদ্ধ করেছেন।

“হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাকো- যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখনো কি নিবৃত হবে না”? সূরা আল-মায়েদাহ ৯০-৯১।

মাদকতো মানুষের চিন্তা-চেতনাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে, ফলে হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য মানুষ যে কোন অনৈতিক কাজে ঝাপিয়ে পড়তে পারে মাদকের কারনে। তাই এইডস থেকে বাঁচতে হলে মাদককে অবশ্যই পরিহার করতে হবে।

রাসূল (সাঃ) বলেন; “তোমরা মদ থেকে বেঁচে থাক, এটা সকল অশ্লীলতার উৎস” -হাকাম।

একজন ঈমানদার কখনোই মাদকের ফাঁদে পা দিতে পারে না। ঈমানদার মাদকে জড়িয়ে পড়লে তার ঈমান চলে যায় এবং তওবা ছাড়া তার পক্ষে আর মুমিন হওয়া সম্ভব নয়। আর তওবা করে মুমিন অবস্থায় ফিরে এলেও মাদকের কারনে যদি এইচআইভি বীজানু শরীরে প্রবেশ করে তবে তওবা কিন্তু এইডস থেকে মুক্ত করে না।

রাসূল (সাঃ) বলেন: “চোর চুরী করার সময় মুমিন থাকে না। ব্যভিচারী ব্যভিচারে রত অবস্থায় মুমিন থাকে না। মদ্যপায়ী মদপানরত অবস্থায় মুমিন তাকে না। অতপর তওবা করলে মুমিন অবস্থায় ফিরে আসে”। -বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী


সিরিঞ্জ ব্যবহারে সতর্কতা জরুরী

প্রতিদিন হাজারো প্রয়োজনে আমাদের চিকিৎসকের সরনাপন্ন হতে হয় এবং ইনজেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ দরকার হয়ে পরে। কিছু কিছু জটিল রোগ রয়েছে যা রোগীদেরকে দিনে একাধিকবার ইনজেকশন নিতে বাধ্য করে। এছাড়া রক্ত পরীক্ষার জন্যও ইনজেকশন ব্যবহার জরুরী। আর এর প্রতিটি পর্যায়েই এইচআইভি সংক্রমনের মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। তাই শরীরে ইনজেকশনের সুই প্রবেশের পূর্বেই নিশ্চিত হওয়া দরকার যে এটি এইচআইভি বীজানু বহন করছে কি না। এজন্য ইনজেকশনের সিরিঞ্জ ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই তা জীবানুমুক্ত করে নেয়া জরুরী। আর এক্ষেত্রে একবার ব্যবহার উপযোগী সিরিঞ্জ ব্যবহার করাই শ্রেয়। বাংলাদেশের এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ফেলে দেয়া পুরনো ইনজেকশনের সিরিঞ্জকে পুনরায় বাজারজাত করে থাকে। এর ফলে শরীরে বিভিন্ন সংক্রমক রোগের বীজানু অনুপ্রবেশের ঝুঁকি থেকেই যায়। তাই এ ব্যাপারে জনসচেতনা এবং সরকারী কঠোর নিয়ন্ত্রন অত্যন্ত জরুরী।


রক্ত পরিসঞ্চালনে সতর্কতা

এছাড়া রক্ত পরিসঞ্চালন চিকিৎসা ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়। কিন্তু জরুরী প্রয়োজনে রক্ত গ্রহণ করতে গিয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারে ভয়ংকর এইচআইভি বীজানু। তাই রক্ত গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই সঠিকভাবে রক্ত পরীক্ষা করে নেয়া অত্যন্ত জরুরী। যদিও এক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে ব্যাপক অবহেলা পরিলক্ষিত হয় বিশেষ করে অদক্ষ ও অশিক্ষিত টেকনিশিয়ান দ্বারা রক্ত পরীক্ষা করিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অগ্রিম সীল ও স্বাক্ষরযুক্ত রিপোর্ট ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে নামী-দামী অনেক প্রতিষ্ঠানের নামেও অভিযোগ পাওয়া যায়। তাই রক্ত পরীক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা ক্লিনিকে পরীক্ষা করানো উচিত।

মাতৃত্বকালীন সতর্কতা জরুরী

এইচআইভি বীজানু মায়ের শরীর থেকে খুব সহজেই গর্ভস্থ শিশুর শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তাই শিশুর সুন্দর ভবিষ্যতের স্বার্থে অত্যন্ত সতর্কাবস্থা জরুরী। প্রসবকালী সময়ে এইচআইভি বহণকারী মায়ের শরীর থেকে শিশুর শরীরে এইচআইভি সংক্রমিত হতে পারে।

এক্ষেত্রে করণীয়:

১। গর্ভাবস্থায় এইচআইভি প্রতিরোধকারী ওষধ নিয়মিত ব্যবহার করা।

২। সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদান করা।

৩। বাচ্চাকে বোতলের দুধ খাওয়ানো। তবে জিডোভুডিন ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে ঝুঁকি কিছুটা হ্রাস করা যায় এবং সন্তানকে মায়ের দুধ পান করানো যায়। কিন্তু এরপরও এইচআইভি সংক্রমনের ঝুঁকি রয়েই যায়। ধারণা করা হয় যে শিশুর শরীরে এইচআইভি সংক্রমনের ১০ভাগ মায়ের দুধের মাধ্যমেই সংক্রমিত হয়।

মনে রাখতে হবে যে মায়ের শরীর থেকে বাচ্চার শরীরে এইচআইভি সংক্রমন প্রতিরোধে যে সকল সতর্কতার কথা বলা হয়েছে তার কোনটাই শতভাগ কার্যকরী পন্থা নয়, পদ্ধতিগুলো ঝুঁকি কিছুটা কমাতে পারে মাত্র, ঝুঁকিমুক্ত করে না।


উল্কি হতে পারে এইচআইভি বাহক

ইদানিং পাশ্চাত্য সমাজের অন্ধ অনুকরণে তরুন সমাজ শরীরে উল্কি অঙ্কনের দিকে ধীরে ধীরে ঝুঁকে পড়ছে। তরুন সমাজ শরীরে উল্কি অঙ্কনকে আধুনিকতার নিদর্শন হিসেবে মনে করছে। অথচ উল্কি আদৌ আধুনিক কোন শিল্পকর্ম নয় বরং অন্ধকার যুগেও উল্কি অঙ্কনের প্রচলন ছিল। অথচ পাশ্চাত্য অনুকরনে শরীরে উল্কি অঙ্কন করে আমাদের তরুনরা ভয়াবহ এইচআইভি সংক্রমনের ঝুঁকিকে বাঁড়িয়ে তুলছে। উল্কি অঙ্কনের জন্য ব্যবহৃত সুঁচ এবং কালি হয়ে উঠতে পারে এইচআইভি সংক্রমনের বাহন। অথচ রাসূল (সাঃ) উল্কি অঙ্কনককে নিষিদ্ধ করেছেন।



এইডস প্রতিরোধে করণীয়

এইডস সম্পর্কে সবচেয়ে ভয়ংকর যে তথ্যটি আমরা এখন পর্যন্ত পাই তা হলো এইডসে আক্রান্ত রোগীকে সুস্থ করার জন্য কোন কার্যকরী ওষুধ এখনো উদ্ভাবন করা সম্ভব হয় নি। “হার্রট” অর্থাৎ Highly active antiretroviral therapy (HAART) নামক এক ধরণের কম্বিনেশন ওষুধ রয়েছে এইডসের চিকিৎসার জন্য যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এ ওষুধ এইডস রোগীকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারে না বরং মৃত্যুকে কিছুদিনের জন্য বিলম্বিত করতে পারে মাত্র। যেহেতু এইডসের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং চিকিৎসায় পুরোপুরি আরোগ্যলাভ অসম্ভব তাই এইডস প্রতিকারের চেয়ে এইচআইভি অনুপ্রবেশ অর্থাৎ এইডস প্রতিরোধই কার্যকর উপায়। তবে হতাশার কথা এই যে, এইডস প্রতিরোধের জন্য ব্যাপক গবেষণা চললেও এর প্রতিরোধের জন্য কোন টীকা বা প্রতিষেধক আবিস্কারে অগ্রগতি ঘটে নি এবং খুব সহসাই এইডস প্রতিরোধক টীকা আবিস্কার হওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। তাই এইচআইভি সংক্রমিত করে এমন সব মাধ্যমগুলো সম্পর্কে সতর্ক থাকা জরুরী।

কনডম শতভাগ নিরাপদ নয়
এইডস সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রচার মাধ্যমে কনডমের ব্যবহারকে উৎসাহিত করার জন্য চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। অথচ এইডস প্রতিরোধে কনডম শতভাগ কার্যকরী পন্থা নয়, এমনকি কনডম জন্মনিয়ন্ত্রনেও শতভাগ সফল নয়। তাই কনডমের কার্যকারীতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদানের জন্য খোদ আমেরিকাতেই জোড় তৎপরতা শুরু হয়েছে।

এইডস প্রতিরোধে সংযত যৌনাচার
যৌনস্পৃহা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। বংশবিস্তারের জন্য তথা মানবজাতির ধারা অব্যাহত রাখতে যৌনমিলনের কোন বিকল্প নেই। আর এ জন্যই মানুষ বিয়ে করে, গড়ে তোলে সমাজের ভিত্তিমূল তথা পরিবার। স্বামী-স্ত্রীর যৌনমিলনে ঘর আলোকিত করে আসে নতুন প্রজন্ম এবং তাকে স্থান ছেড়ে দিয়ে পৃথিবী থেকে এক সময় বিদায় নেয় পূর্বসূরীরা। এভাবেই ক্রমান্বয়ে মানবজাতি অব্যাহতভাবে টিকিয়ে রেখেছে তার অস্তিত্ব।

কিন্তু পরিবার প্রথার বাইরে অবাধ যৌনাচার একদিকে যেমন পরিবারকে করে তোলে অশান্ত, সমাজকে করে কলুষিত তেমনি ভয়াবহতম আপদ তথা এইডসের বিস্তার ঘটিয়ে অপরাধী-নিরপরাধ এমনকি নিষ্পাপ শিশুদের পর্যন্ত মৃত্যুর কোলে ঠেলে দেয়, মানবজাতির অস্তিত্বকে করে হুমকির সম্মুখীন। একজন অনৈতিক যৌনাচারী এইডসের বীজানু বহণ করে রোপন করে স্ত্রী/স্বামীর শরীরে, স্ত্রীর শরীর থেকে তা চলে যায় গর্ভস্থ সন্তানের শরীরে। অথচ স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের প্রতি বিশ্বস্ত থাকলে খুব সহজেই এইডসের ভয়াবহতা থেকে মুক্ত থাকা যায়।

ব্যভিচার এইডসের প্রধান বাহক
ইসলাম যৌনতাকে অস্বীকার করে না বরং নির্ধারিত সীমার মাঝে যৌনাচারকে ইসলাম ইবাদত হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। অবাধ যৌনাচার বা ব্যভিচারকে ইসলাম কখনো অনুমোদন করে না এমনকি ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন বিষয়গুলোকে থেকেও বেঁচে থাকতে ইসলাম নির্দেশ দেয়।

আর ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ। -সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত ৩২

ব্যভিচারকে ইসলাম এতটাই অভিষপ্ত কাজ বলে সাব্যস্ত করেছে যে আল্লাহ ব্যভিচারী/ব্যভিচারীনীর জন্য কঠোরতম শাস্তি এবং তা জনসম্মুখে বাস্তবায়নের বিধান করেছেন।

ব্যভিচারিনী নারী, ব্যভিচারী পুরষ, তাদের প্রত্যেককে একশ করে বেত্রাঘাত কর।আল্লাহর বিধান কার্যকর কারণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের দয়ার উদ্রেগ না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। সূরা আন-নূর ২

শুধু তাই নয় ব্যভিচারী/ব্যভিচারীনীর সাথে মুমিনদের বিয়েকেও আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন:

ব্যভিচারী পুরষ কেবল ব্যভিচারী নারী অথবা মুশরিক নারীকেই বিয়ে করে এবং ব্যভিচারীনীকে কেবল ব্যভিচারী অথবা মুশরিক পুরুষই বিয়ে করে এবং এদেরকে মুমিনদের জন্য হারাম করা হয়েছে। সূরা আন-নূর ৩

সমকামিতা নিকৃষ্টতম যৌনাচার]
সমকামিতা প্রকৃতি ও নৈতিকতা বিরুদ্ধ নিকৃষ্টতম যৌনাচার। এইডসসহ যাবতীয় যৌনরোগ সংক্রমনের অন্যতম ঘৃণ্য মাধ্যম সমকামিতা। জানামতে কোন ধর্মই সমকামিতাকে বৈধ মনে করে না এবং ইসলাম সমকামিতার ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর মনোভাব পোষণ করে। সমকামিতার আল্লাহর কাছে এতটাই ঘৃণ্য আচরণ যে এ অন্যায় আচরণের জন্য তিনি হয়রত লুত (সাঃ) -এর সভ্যতাকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ সমকামিতাকে নিষিদ্ধ করে বলেন:

এবং আমি লূতকে প্রেরণ করেছি। যখন সে স্বীয় সম্প্রদায়কে বলল: তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে সারাবিশ্বের কেউ করেনি? তোমরা তো কামবশত: পুরুষদের কাছে গমন কর নারীদেরকে ছেড়ে। বরং তোমরা সীমা অতিক্রম করছ। সূরা আল-আ’রাফ ৮০-৮১

সারা জাহানের মানুষের মধ্যে তোমরাই কি পুরুণদের সাথে কুকর্ম কর? এবং তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের যে স্ত্রীগণকে সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকে বর্জন কর? বরং তোমরা সীমা লংঘনকারী সম্প্রদায়। সূরা আশ শো’আরা ১৬৫-১৬৬

শুধু তাই নয় যৌনআবেগের সাথে পুরুষের সাথে পুরুষের কিংবা নারীর সাথে নারীর আলিঙ্গণকেও ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে এবং একে ব্যভিচার হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।

রাসূল (সাঃ) বলেন, যৌন আবেগের সাথে নারীদের পারস্পরিক আলিঙ্গনও ব্যভিচারের পর্যায়ভুক্ত -তাবারানী

স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গমও হারাম
ইসলামে স্বামী-স্ত্রীকে একে অপরের পরিচ্ছদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ স্বামী এবং স্ত্রীর মাঝে যৌনাচারের ক্ষেত্রে অবাধ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর অবাধ মেলামেশার পরেও কয়েকটি ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ বেঁধে দেয়া হয়েছে। ঋতুকালীন সময়ে স্ত্রী সহবাসকে ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে।

আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে ঋতু সম্পর্কে। বলে দাও, এটা অশুচি। কাজেই তোমরা ঋতুঅবস্থায় স্ত্রীগমন থেকে বিরত থাক। সূরা বাক্বারা -২২২

শুধু তাই নয়, সমকামিতা যেমন ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে ঠিক তেমনি স্ত্রীর মলদ্বারেও সংগমকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে।

কিভাবে এইচ আই ভি সংক্রমন হতে পারে? চিকিত্সা ও প্রতিরোধ

 কিভাবে একজন ব্যক্তির মধ্যে এইচ আই ভি সংক্রমন হতে পারে?

চারটি প্রধানভাবে এইচ আই ভি একজন ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির শরিরে যেতে পারে।

* একজন ব্যক্তি যার এইচ আই ভি আছে. তার সঙ্গে স্ত্রী যোনী অথবা মলাদ্বারের ভিতর দিয়ে কনডোম ব্যবহার না করে যৌন সঙ্গম করলে।
* যে ব্যক্তির এই সংক্রমক রোগ আছে তার ব্যবহার করা ইনজেকশানের জিনিষপত্র, যেটাতে সংক্রামক রক্ত লেগে আছে, সেটা ব্যবহার করলে।
* যে মহিলার এইচ আই ভি আছে, তার সন্তানের এটা হতে পারে, যখন তিনি সন্তান সম্ভবা তখন, সন্তানের জন্মের সময় অথবা সন্তানের জন্মের পর বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে তার থেকে এই রোগ সন্তানের মধ্যে বিস্তার লাভ করতে পারে,
* ইনজেকশন দেওয়ার ফলে অথবা কোন সংক্রামক ব্যক্তির রক্ত অন্য কোন ব্যক্তিকে দেওয়ার ফলে।
*

প্রতিদিনের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আপনার এইচ আই ভি হতে পারে না। যেমন:

* সামাজিক চুমু দেওয়া, স্পর্শ করা, জড়িয়ে ধরা, হাত মেলানো।
* একই সুইমিং পুল ব্যবহার করা, একই পায়খানা, থালা-বাসন, হাতা-চামচ, ব্যবহার করা অথবা
* যে ব্যক্তির “এইচ আই ভি” আছে তার রান্না করা খাবার খাওয়া।
* কাশি, হাঁচি, বা চোখের জল, পোকা-মাকড় অথবা পশুর কামড়ের দ্বারা।

যৌন সঙ্গম সম্বন্ধে?

আপনি যদি, যে ব্যক্তিরযৌন সংক্রামক রোগ আছে, তার সঙ্গে কনডোম ব্যবহার না করে, স্ত্রী যোনী অথবা মলাদ্বার দ্বারা যৌন সঙ্গম করেন, তাহলে আপনার এইচ আইভি এবং অন্যান্য যৌন সংক্রামক রোগ হতে পারে। যদি আপনি যৌন সঙ্গম করে থাকেন, তাহলে কনডোম ব্যবহার করুন। কনডোম এইচ আই ভির বিরুদ্ধে কার্যকরী প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে পারে। কনডোম অন্যান্য যৌন সংক্রামক রোগগুলি এবং সন্তান না চাইলে, সেগুলির বিরুদ্ধে প্রতিরোধের কাজ করে।

ঔষধ গুলি সম্বন্ধে?

আপনি যদি ইনজেকশনের দ্বারা ড্রাগ নিয়ে থাকেন এবং সেই ইনজেকশনের সূঁই অন্য ব্যক্তিরাও ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে আপনি এইচ আই ভি এবং অন্যান্য রোগ যেগুলি রক্ত দ্বারা সংক্রামিত হয়, যেমন হেপাটাইটিস্ ‘সি’, এইগুলির দ্বারা সংক্রামিত হতে পারেন। আপনি যদি ইনজেকশন দ্বারা ড্রাগ নিয়ে থাকেন, তাহলে প্রত্যেকবার ইনজেকশন নেওয়ার সময় নূতন সূঁই ব্যবহার করুন এবং কখনও অন্য কারো ব্যবহৃত সূঁই ব্যবহার করবেন না বা আপনার সূঁই অন্য কাউকে ব্যবহার করতে দেবেন না।

বাচ্চা হওয়া সম্বন্ধে?

আপনার যদি এইচ আইভি থাকে এবং আপনি সন্তান সম্ভবা, তাহলে বাচ্চা হওয়ার আগে, প্রসবের সময়ে এবং বাচ্চার জন্মের পরের যথাযথ যত্ন নেওয়ার দ্বারা আপনার বাচ্চার এইচ আই ভি দ্বারা সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা শতকরা ২০ ভাগ থেকে শতকরা এক ভাগ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এইচ আই ভি সংক্রামনের ঝুঁকি বা সম্ভাবনা কমানোর জন্য আপনি নিম্নলিখিতগুলি করতে পারেন:

* গর্ভ ধারন অবস্থায় চিকিত্সার সময়ে এইচ আই ভি প্রতিরোধকারী ঔষধগুলি ব্যবহার করুন।
* স্বাভাবিকভাবে বাচ্চার জন্মের জন্য অপেক্ষা না করে সিজারিয়ান অপারেশনের দ্বারা বাচ্চার জন্ম দিন।
* যদি সম্ভব হয় তাহলে বাচ্চাকে বোতলের দুধ খাওয়ান। এটা মনে করা হয় যে সম্ভবত: শতকরা ১০ ভাগ এইচ আই ভি মায়ের থেকে বাচ্চার শরীরে যায়।

রক্ত দেওয়া এবং রক্ত নেওয়া সম্বন্ধে?

ইউ কে তে রক্ত দেওয়া নিরাপদ। রক্ত দেওয়ার যন্ত্রপাতিগুলি জীবানুমুক্ত এবং কেবলমাত্র একবার ব্যবহার করা হয়। সব রক্তগুলি এবং শরীরের যন্ত্রপাতি গুলি,(হার্ট, লিভার ইত্যাদি) যেগুলি অন্য ব্যক্তির শরীরে লাগানো হয় এবং কোষগুলিকে (টিস্যু/tissue) ব্যবহার করার আগে এইচ আই ভি জীবানু আছে কি না সেটা পরীক্ষা করে দেখা হয়। রক্ত গুলিতে যাতে কোন এইচ আই ভির জীবানু না থাকে, সেজন্য সেগুলিকে তাপের দ্বারা চিকিত্সা করা হয়। এর মানে হল যে ইউকে তে বর্তমানে শরীরে রক্ত দিলে এইচ আই ভি জীবানু দ্বারা সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে।

এইচ আই ভির পরীক্ষা কি?

কোন ব্যক্তির এইচ আই ভি আছে কি না সেটা সাধারনত: নির্ণয় করা হয় রক্ত পরীক্ষার দ্বারা। এই পরীক্ষাকে বলা হয় এইচ আই ভি এন্টিবডি বা শরীরের জীবানু নাশক পদার্থের পরীক্ষা অথবা এইচ আই ভির পরীক্ষা। এই ব্যবস্থাতে এটাই পরীক্ষা করে দেখা হয় যে শরীরে যদি এইচ আই ভি থাকে তাহলে শারীরের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থার দ্বারা যে এন্টিবডি বা শরীরের জীবানু নাশক পদার্থের উত্পাদন হওয়ার কথা, সেটা হয়েছে কি না। যখন একজন ব্যক্তি এইচ আই ভির জীবানু দ্বারা সংক্রামিত হয়ে থাকেন, তখন শরীরের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা এন্টিবডি বা শরীরের জীবানু নাশক পদার্থের উত্পাদন হয়েছে কি না সেটা পরীক্ষায় ধরা পড়তে তিন মাস পর্য্যন্ত সময় লাগতে পারে। এই তিন মাস সময়কে বলা হয় “জানালার কাল/উইন্ডো পিরিয়ড অথবা সেরোকনভারশন।

যদি পরীক্ষা করে এন্টিবডি বা শরীরের জীবানু নাশক পদার্থ পাওয়া যায়, তাহলে তার মানে হল সেই ব্যক্তির “এইচ আই ভি” আছে। যদি পরীক্ষা করে এই এন্টিবডি বা শরীরের জীবানুনাশক পদার্থ না পাওয়া যায়, তাহলে তার মানে হল যে সেই ব্যক্তির শরীরে এইচ আই ভি নাই। এই পরীক্ষা অবশ্যই তিন মাস জানালার কাল/উইন্ডো পিরিয়ডের পরে করাতে হবে। আপনি যদি এই এইচ আই ভি পরীক্ষা করাবার কথা চিন্তা করছেন আপনি তাহলে সেক্সুয়াল হেল্থ ইনফরমেশন লাইনে যোগাযোগ করতে পারেন (০৮০০ ৫৬৭ ১২৩)। তারা আপনাকে এই পরীক্ষার জন্য কি কি করতে হবে এবং এর জন্য কোন জায়গায় যাওয়া সবচাইতে ভাল সেটাও তারা আপনাকে বলতে পারবে।

এইচ আই ভির কি চিকিত্সা করা যায়?

এন্টি এইচ আই ভি থেরাপি বা এন্টিবডির বিরুদ্ধে চিকিত্সার জন্য যে ঔষধগুলি ব্যবহার করা হয় সেগুলি এইচ আই ভিকে আক্রমন করে। এইচ আই ভির জীবানুগুলি যাতে শরীরের কোষের ভিতর পুর্নগঠিত না হতে পারে, ঔষধগুলিতে সেই কাজ হয়, কিন্তু এই ঔষধগুলি এইচ আই ভির জীবানুকে সম্পূর্নভাবে ধ্বংস করতে পারে না।

এন্টি এইচ আই ভি থেরাপি বা এন্টি এইচ আই ভির বিরুদ্ধে চিকিত্সার জন্য সাধারনত তিনটা বা তার বেশী ঔষধকে একসঙ্গে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। এটাকে বলা হয় মিলিত চিকিত্সা/কম্বিনেশন থেরাপি অথবা হাইলি একটিভ এ়ন্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি(HAART)/ অত্যন্ত কর্মক্ষম বীজানু বৃদ্ধি প্রতিরোধকারী চিকিত্সা। ১৯৯৬ সালে এইভাবে এইচ আই ভির চিকিত্সা আরম্ভ হয় এবং তখন থেকে দেখা গেছে যে এইচ আই ভি কে সংযত রাখতে এই চিকিত্সা খুবই উপকারী এবং ফলে বহু ব্যক্তিরই এইচ আই ভি এইড্‌সে পরিণত হতে দেরী হয়, তবে সকলের নয়।

এই চিকিত্সা বহু ব্যক্তিকেই সাহায্য করছে, তবে শরীরের উপরে এর পরোক্ষ প্রতিক্রিয়া পড়ে এবং কখনও কখনও এই প্রতিক্রিয়াগুলি বেশ কঠিন হয়। এর ফলে এই চিকিত্সা চালানো কঠিন হয়ে পড়ে এবং ঔষধ খাওয়া সম্ভব হয় না। তাদের জন্য তখন বেশ জঠিল চিকিত্সার পথ নিতে হয়। পিলগুলি খেতে না পারলে চিকিত্সা কার্যকরী হয় না। এ ছাড়াও যত বেশীদিন ধরে এই ঔষধগুলি খাওয়া হয়, ততই তাদের কার্যকরীতা কমতে থাকে। যখন ঔষধ আর এইচ আই ভি জীবানুর বিরুদ্ধে কাজ করে না, তখন এই চিকিত্সার আর কোন কার্যকরীতা থাকে না। যখন একটা মিলিত চিকিত্সা/কম্বিনেশন থেরাপি আর কাজ করে না, তখন অন্য ধরনের মিলিত ঔষধ/কম্বিনেশন ড্রাগ খেতে হয়। এই চিকিত্সা যত বেশী ব্যর্থ হবে, ততই এই মিলিত চিকিত্সা /কম্বিনেশন থেরাপী যেটা কাজ করে, সেটা খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।

এইচ আই ভি সংক্রামন প্রতিরোধ করার জন্য কি কোন ঔষধ আছে?

বর্তমানে এইচ আই ভিকে প্রতিরোধ করার জন্য কোন রকম টিকা বা ইনজেকশন নাই এবং এইড্‌স সারানোর জন্যও কোন রকম চিকিত্সা নাই। পরীক্ষামূলক টিকা তৈরী করবার চেষ্টা চলছে কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে এই রোগ প্রতিরোধ করার জন্য কোন টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।



 thanks to 
adult24bd blog


2 comments:

Unknown said...

১ বছর ৭/৮ মাস আগে সেক্স করেছিলাম হোটেলে, কন্ডম পরেছিলাম।
এত দিন পর মনে ভয় ঢুকলো তাই রক্ত টেস্ট করলাম।
প্রথমে সিলেট ওসমানিতে করালাম, নেগেটিভ এসেছে।
সন্দেহ দূর করতে আবার টেস্ট করালাম রেড ক্রিসেন্টে নেগেটিভ এসেছে।
আরো সন্দেহ দূর করতে ১ সপ্তাহ পর টেস্ট করালাম ইবনে সিনাতে, নেগেটিভ এসেছে।

৩ বার টেস্টের রিজাল্ট নেগেটিভ। ১ ব্যাগ রক্ত ও দিলাম রেড ক্রিসেন্ট এ।
ভয় দূর হল।
গতদিন সময় টিভিতে দেখলাম, " বাংলাদেশে নাকি এখনো পুরোনো সিস্টেমে রক্ত পরীক্ষা করা হয় তাই রক্তে অনেক সময় রোগ ধরা পরে না "

এই নিউজ শুনে খুব ভয়ে আছি।

আমি ৩ বার পরীক্ষা করালাম, এখন ৩ বার ও কি ভুল আসতে পারে রিজাল্ট?

MUDASSAR said...

Don't worry ....