বছর শুরু গ্রীষ্মকালে। গ্রীষ্মের দাবদাহে প্রচন্ড গরমে ঝরঝরে ঘাম, রাজ্যের
পিপাসা, পানিশূণ্যতা, হিট স্ট্রোক, শারীরিক দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা, ঘামাচি,
গরম থেকে ঠান্ডা লাগা, খাদ্যে বিষক্রিয়া- কত সমস্যা হতে পারে মানুষের
শরীরে! একটু সতর্ক থেকে বছর শুরুর এই ঋতুতে সুস্থ থাকুন।
চোখে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিন:প্রচণ্ড গরমে অনেকেরই চোখ জ্বালা করে। এই পরিস্থিতিতেচোখে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিলে আরাম লাগবে। পারলে কিছুক্ষণ ঠাণ্ডা পরিবেশে বিশ্রাম নিতে হবে, পান করে নিতে হবে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি।
পান করুন পর্যাপ্ত পানি: গ্রীষ্মের গরমে ঘেমে ঘেমে কমে যায় শরীরের পানি। সেই সাথে কিছু খনিজ লবণ। পানির এ ঘাটতি পূরণ করতে পান করুন পর্যাপ্ত পানীয়। পানিশূণ্যতা প্রতিরোধের জন্যও পানি পান করা গুরুত্বপূর্ণ। দৈনিক আট গ্লাস বা তার চেয়ে বেশি পানি পান করা উচিৎ। পান করুন ততক্ষণ যতক্ষণ না তৃষ্ণা মিটে। আর তৃষ্ণা পেলেই পান করুন পানীয়। ঠান্ডা বিশুদ্ধ পানিই উৎকৃষ্ট পানীয়। ফ্রিজের অতি ঠান্ডা পানি নয়, তা গলা ব্যথার কারণ হতে পারে। গরমে শিশুরা পানিশূণ্যতায় আক্রান- হয় বড়দের চেয়ে দ্রুত। তাই শিশুরা যেন পর্যাপ্ত পানি পান করে, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। চিনির সরবত প্রয়োজন নেই মোটেও। বাইরের সরবত বা ফলের রস খাওয়ার পূর্বে এগুলোর পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে নিশ্চিত হোন। আইস ক্রীমের ঠান্ডায় গলা ব্যথা হতে পারে। জীবাণুমুক্ত না থাকলে হতে পারে জন্ডিস, আমাশয়, ডায়রিয়া, টাইফয়েড। মৌসুমী ফলও পানির চাহিদা মিটাবে। মিটাবে ক্ষুধা। শক্তিও দেবে বেশ। তাই যথেষ্টই আহার করুন তরমুজ, শশা, পেঁপে, লিচু, আম, কলা, বেল, বাঙ্গি ইত্যাদি ফল। শরীর ঠান্ডা থাকবে। তবে অনেক বেশি খেয়ে বদহজম, পেট খারাপ বা পাতলা পায়খানা যেন না হয়, সে খেয়ালও রাখুন। শরীর যখন ঘামে তখন ঘামের সাথে শরীরের লবণও বের হয়ে যায় যথেষ্ট পরিমাণে। শরীরে লবণের ঘাটতি হলে শরীর হয়ে পড়ে দুর্বল, ক্লান্ত। মাংসপেশিতে হতে পারে খিঁচুনি। লবণের এ ঘাটতিও পূরণ হওয়া চাই। ফলমূল এ ঘাটতি পূরণে অবশ্যই সহায়ক। খাবার স্যালাইনও পান করতে পারেন প্রয়োজনে।
গরম থেকে হিট স্ট্রোক:পর্যাপ্ত পানি পান না করলে বেশি গরমে শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে হতে পারে হিট স্ট্রোক। জ্বর, ঘামহীন শুষ্ক ত্বক, শ্বাস প্রশ্বাসের হার বৃদ্ধি, হৃদস্পন্দনের হার বৃদ্ধি, বমি বমি ভাব, মাথা ব্যাথা, খিঁচুনি, এমন কি অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
কাপড় চোপড় হোক আরামদায়ক: হালকা রঙের পাতলা সুতি কাপড়ের ঢিলেঢালা জামা কাপড় পরিধান করুন। কাপড়ের রং হালকা হলে তা বাইরের তাপ শোষণ করবে কম। পাতলা সুতি কাপড়ের ভেতর দিয়ে বায়ু চলাচল করতে পারবে বেশ। শরীরে গরম অনুভূত হবে কম, আরাম লাগবে বেশি।
বাইরে গেলে ভাবতে হবে: সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রশ্মির জন্য হতে পারে ত্বকের ক্যান্সার। ক্ষতি হতে পারে চোখেরও। রোদের হাত থেকে ত্বক ও চোখ বাঁচতে মাথায় ব্যবহার করুন ছাতা বা ক্যাপ। চোখে সান গ্লাস বা রোদ চশমা। আর গায়ে আরাম দায়ক জামাকাপড় তো থাকতেই হবে।
ঘাম থেকে ঘামাচি: আমাদের ত্বকে আছে অজস্র ঘর্মগ্রন্থি। এগুলো থেকে ঘাম বের হয়। ঘামের সাথে ত্বকের ময়লা যুক্ত হয়ে এই গ্রন্থিগুলোর মুখ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ঘাম জমা হবে ভেতরে, আর গ্রন্থিগুলো ওঠবে ফুলে। হয়ে যাবে ঘামাচি। বেশি ঘামলে ঘামাচি হবার সম্ভাবনা বেশি। শিশুদের ঘর্মগ্রন্থিগুলো কম পরিপক্ক। ফলে তাদের ঘামাচি হবার সম্ভাবনা বড়দের চেয়ে বেশি। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে বা সাবান দিয়ে নিয়মিত ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে ঘামাচি হবে কম। পাতলা জামাকাপড় পরিধান করলে শরীর ঘামবে কম। তাতেও ঘামাচির আশঙ্কা কমবে।
গরমের ঠান্ডা লাগার ভয়: শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা খুব বেশি কম হলে ঠান্ডা লাগতে পারে। ঠান্ডা লাগতে পারে ঘামের শরীরে গোসল করলেও। ঠান্ডা পানিতে গোসল আরামদায়ক। তবে গোসলের পূর্বে শরীরের ঘাম শুকাতে দিন।
শরীর থেকে দুর্গন্ধ দূর করতে পরিচ্ছন্ন গোসল:
পরিচ্ছন্নতার জন্য গরমকালে দু’বার গোসল করে নেওয়া ভালো। দুর্গন্ধ দূর করার জন্য বারবার সাবান ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে ত্বকের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। তবে গোসলে বিশেষ ধরনের সাবান অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সোপ ব্যবহারে উপকার আছে।
রোগজীবাণু বাড়ে দ্রুত: গরম আবহাওয়ায় খাবার রেখে দিলে তাতে রোগজীবাণু বংশবৃদ্ধি করে দ্রুত। সুতরাং রান্না করা খাবার খেতে হবে গরম গরম। পরে খেতে চাইলে তা রেখে দিতে হবে ফ্রিজে। অন্যথায় ফুড পয়জনিং হয়ে হতে পারে ডায়রিয়া, পেট ব্যথা, বমি।
বিশ্রাম নিন পরিমিত: ঘামে ক্লান্ত দুর্বল শরীর সকল পরিশ্রম না ও সইতে পারে। ব্যায়াম বা পরিশ্রম করুন সহনীয় পর্যায়ে। সেটাও সকালে বা বিকেলে। দুপুরের কড়া রোদে নয়। বিশ্রাম নিন পরিমিত।
খেতে হবে শাকসবজি ফলমূল:
গরমের দিনে চর্বিযুক্ত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা ভালো। চর্বি জাতীয় খাবার শরীর আরো উত্তাপ লাভ করবে, ঘাম ও অস্বস্তি দুই-ই বাড়বে। চবির্র সঙ্গে অতিমাত্রায় চিনিযুক্ত খাবারও এড়িয়ে চলা স্বস্তিদায়ক। এ সময় নিয়মিত খাবারের তালিকায় যোগ করতে হবে ফলমূল ও শাকসবজি।
সূযের্র পোড়া এড়াতে সানস্ক্রিন
সূযের্র দাবদাহ থেকে ত্বককে রক্ষা করার জন্য শরীরের উন্মুক্ত অংশে সানস্ক্রিন ক্রিম মাখা যেতে পারে। সানস্ক্রিন প্রতি তিন ঘণ্টা অন্তর মাখতে হয়। বাজারে বিভিন্ন ধরনের সানস্ক্রিন বা সানব্লকার ক্রিম পাওয়া যায়। আমাদের দেশের জন্য এসপিএফ-১৫ শক্তিসম্পন্ন সানব্লকারই যথেষ্ট বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। গরমে অনেকেরই ত্বক লালাভ হয়ে ওঠে। ত্বকে চাকা চাকা র্যাশও ওঠে অনেকের। এই র্যাশগুলো খুব চুলকায়। এই ধরনের র্যাশ ঠাণ্ডা পরিবেশে অর্থাৎ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে থাকলে কমে যায় বা চলে যায়। অবস্থাটা এ রকম হলে বুঝতে হবে গরমে ত্বকের অতিসংবেদনশীলতার জন্য এমনটি হচ্ছে।
ALT TIP
*এই গরমে সুস্থ থাকার একটি প্রধান উপায় হচ্ছে সঠিক পোশাক নির্বাচন। আর এই সময় সবচেয়ে উপকারী পোষাক হচ্ছে সূতি কাপড়ের তৈরি পোশাক। কারন সারাদিন বাইরে থাকার ফলে শরীরে যে ঘাম হয় তা সূতি খাপড় খুব সহজেই শুষে নিতে পারে। এছাড়া সূতির পাশাপাশি ধূপিয়ান, লিলেন, টাইডাই ও কটনও নির্বাচন করতে পারে। কাতান, টিস্যু, জর্জেট এই ধরনের কাপড় যথা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। এছাড়া যারা বাইরে যাওয়ার সময় শাড়ি পরে থাকেন তারা সূতি, খাদি কাপড় নির্বাচন করতে পারেন। আজকাল সূতি কাপড়ের উপর অনেক ধরনের হালকা ডিজাইনের নকশা দেখা যায়। এসব পোশাকও সবার গায়ে খুব ভালো মানিয়ে যায়। এছাড়া রঙ নির্বাচনের খেত্রেও অনেক সতর্ক থাকা উচিত। এ সময় উজ্জ্বল রঙের পোষাক না পরাই ভালো। হালকা নীল, ধূসর, বালামী, হালকা গোলাপী, সাদা, মেজেন্টা এই ধরনের রঙ বেশী ভালো হয়। ছেলেদের ক্ষেত্রে টি শার্ট, থ্রী কোয়ার্টার প্যান্ট অথবা সূতির চেক শার্ট বেছে নিতে পারেন। এই ধরনের পোষাক সব যায়গায় ব্যাবহারের জন্য খুবই মানানসই হয়।
*এই সময় শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পরিমানে পানি শরীর থেকে বের হয়ে যায়। ফলে শরীরে পানিশূন্যতা ও বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়ে থাকে। তাই এই সময় সুস্থ থাকতে চাইলে প্রচুর পরিমানে পানি পান করুন। প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করুন। এছাড়া পানির সাথে সাথে বিভিন্ন ফলের জুস যেমন আম, তরমুজ, আখের রস, ডাবের পানি পান করুন। এ সময় বাড়িতে স্যালাইন অথবা গ্লুকোজ রাখুন। কারণ এগুলো শরীরে পানিশূন্যতা কমিয়ে শরীরে লবনের পরিমান ঠিক রাখতে সাহায্য করে। তবে রাস্তার পাশে অস্বাস্থকর পানীয় থেকে সাবধান থাকুন। কারন এগুলো পানে শরীর সুস্থ থাকার পরিবর্তে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
*এই সময় সচরাচর ভারী খাবার নয়া খাওয়াই ভালো। এছাড়া অতিরিক্ত তেল যুক্ত খাবারও এই সময় এড়িয়ে চলা উচিত। কারন ভারী খাবার খেলে এই সময় অতিরিক্ত গরম লাগবে এবং শরীর খারাপ হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে বিকালের নাস্তায় হালকা ফলমূল ও ফলের রস খেতে পারেন। এতে শরীর সুস্থ থাকবে।
*গরমের সময় সবসময় খোলামেলা জুতা পরা উচিত। এতে শরীর ঠান্ডা থাকে। এ সময় কখনো মোজা পরা উচিত নয়। এতে পায়ে বাতাস চলাচল করতে পারে নয়া এবং শরীর গরম থাকে। প্রতিদিন ব্যাবহারের জন্য খোলামেলা স্যান্ডের ব্যাবহার করতে পারেন।
চোখে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিন:প্রচণ্ড গরমে অনেকেরই চোখ জ্বালা করে। এই পরিস্থিতিতেচোখে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিলে আরাম লাগবে। পারলে কিছুক্ষণ ঠাণ্ডা পরিবেশে বিশ্রাম নিতে হবে, পান করে নিতে হবে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি।
পান করুন পর্যাপ্ত পানি: গ্রীষ্মের গরমে ঘেমে ঘেমে কমে যায় শরীরের পানি। সেই সাথে কিছু খনিজ লবণ। পানির এ ঘাটতি পূরণ করতে পান করুন পর্যাপ্ত পানীয়। পানিশূণ্যতা প্রতিরোধের জন্যও পানি পান করা গুরুত্বপূর্ণ। দৈনিক আট গ্লাস বা তার চেয়ে বেশি পানি পান করা উচিৎ। পান করুন ততক্ষণ যতক্ষণ না তৃষ্ণা মিটে। আর তৃষ্ণা পেলেই পান করুন পানীয়। ঠান্ডা বিশুদ্ধ পানিই উৎকৃষ্ট পানীয়। ফ্রিজের অতি ঠান্ডা পানি নয়, তা গলা ব্যথার কারণ হতে পারে। গরমে শিশুরা পানিশূণ্যতায় আক্রান- হয় বড়দের চেয়ে দ্রুত। তাই শিশুরা যেন পর্যাপ্ত পানি পান করে, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। চিনির সরবত প্রয়োজন নেই মোটেও। বাইরের সরবত বা ফলের রস খাওয়ার পূর্বে এগুলোর পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে নিশ্চিত হোন। আইস ক্রীমের ঠান্ডায় গলা ব্যথা হতে পারে। জীবাণুমুক্ত না থাকলে হতে পারে জন্ডিস, আমাশয়, ডায়রিয়া, টাইফয়েড। মৌসুমী ফলও পানির চাহিদা মিটাবে। মিটাবে ক্ষুধা। শক্তিও দেবে বেশ। তাই যথেষ্টই আহার করুন তরমুজ, শশা, পেঁপে, লিচু, আম, কলা, বেল, বাঙ্গি ইত্যাদি ফল। শরীর ঠান্ডা থাকবে। তবে অনেক বেশি খেয়ে বদহজম, পেট খারাপ বা পাতলা পায়খানা যেন না হয়, সে খেয়ালও রাখুন। শরীর যখন ঘামে তখন ঘামের সাথে শরীরের লবণও বের হয়ে যায় যথেষ্ট পরিমাণে। শরীরে লবণের ঘাটতি হলে শরীর হয়ে পড়ে দুর্বল, ক্লান্ত। মাংসপেশিতে হতে পারে খিঁচুনি। লবণের এ ঘাটতিও পূরণ হওয়া চাই। ফলমূল এ ঘাটতি পূরণে অবশ্যই সহায়ক। খাবার স্যালাইনও পান করতে পারেন প্রয়োজনে।
গরম থেকে হিট স্ট্রোক:পর্যাপ্ত পানি পান না করলে বেশি গরমে শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে হতে পারে হিট স্ট্রোক। জ্বর, ঘামহীন শুষ্ক ত্বক, শ্বাস প্রশ্বাসের হার বৃদ্ধি, হৃদস্পন্দনের হার বৃদ্ধি, বমি বমি ভাব, মাথা ব্যাথা, খিঁচুনি, এমন কি অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
কাপড় চোপড় হোক আরামদায়ক: হালকা রঙের পাতলা সুতি কাপড়ের ঢিলেঢালা জামা কাপড় পরিধান করুন। কাপড়ের রং হালকা হলে তা বাইরের তাপ শোষণ করবে কম। পাতলা সুতি কাপড়ের ভেতর দিয়ে বায়ু চলাচল করতে পারবে বেশ। শরীরে গরম অনুভূত হবে কম, আরাম লাগবে বেশি।
বাইরে গেলে ভাবতে হবে: সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রশ্মির জন্য হতে পারে ত্বকের ক্যান্সার। ক্ষতি হতে পারে চোখেরও। রোদের হাত থেকে ত্বক ও চোখ বাঁচতে মাথায় ব্যবহার করুন ছাতা বা ক্যাপ। চোখে সান গ্লাস বা রোদ চশমা। আর গায়ে আরাম দায়ক জামাকাপড় তো থাকতেই হবে।
ঘাম থেকে ঘামাচি: আমাদের ত্বকে আছে অজস্র ঘর্মগ্রন্থি। এগুলো থেকে ঘাম বের হয়। ঘামের সাথে ত্বকের ময়লা যুক্ত হয়ে এই গ্রন্থিগুলোর মুখ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ঘাম জমা হবে ভেতরে, আর গ্রন্থিগুলো ওঠবে ফুলে। হয়ে যাবে ঘামাচি। বেশি ঘামলে ঘামাচি হবার সম্ভাবনা বেশি। শিশুদের ঘর্মগ্রন্থিগুলো কম পরিপক্ক। ফলে তাদের ঘামাচি হবার সম্ভাবনা বড়দের চেয়ে বেশি। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে বা সাবান দিয়ে নিয়মিত ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে ঘামাচি হবে কম। পাতলা জামাকাপড় পরিধান করলে শরীর ঘামবে কম। তাতেও ঘামাচির আশঙ্কা কমবে।
গরমের ঠান্ডা লাগার ভয়: শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা খুব বেশি কম হলে ঠান্ডা লাগতে পারে। ঠান্ডা লাগতে পারে ঘামের শরীরে গোসল করলেও। ঠান্ডা পানিতে গোসল আরামদায়ক। তবে গোসলের পূর্বে শরীরের ঘাম শুকাতে দিন।
শরীর থেকে দুর্গন্ধ দূর করতে পরিচ্ছন্ন গোসল:
পরিচ্ছন্নতার জন্য গরমকালে দু’বার গোসল করে নেওয়া ভালো। দুর্গন্ধ দূর করার জন্য বারবার সাবান ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে ত্বকের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। তবে গোসলে বিশেষ ধরনের সাবান অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সোপ ব্যবহারে উপকার আছে।
রোগজীবাণু বাড়ে দ্রুত: গরম আবহাওয়ায় খাবার রেখে দিলে তাতে রোগজীবাণু বংশবৃদ্ধি করে দ্রুত। সুতরাং রান্না করা খাবার খেতে হবে গরম গরম। পরে খেতে চাইলে তা রেখে দিতে হবে ফ্রিজে। অন্যথায় ফুড পয়জনিং হয়ে হতে পারে ডায়রিয়া, পেট ব্যথা, বমি।
বিশ্রাম নিন পরিমিত: ঘামে ক্লান্ত দুর্বল শরীর সকল পরিশ্রম না ও সইতে পারে। ব্যায়াম বা পরিশ্রম করুন সহনীয় পর্যায়ে। সেটাও সকালে বা বিকেলে। দুপুরের কড়া রোদে নয়। বিশ্রাম নিন পরিমিত।
খেতে হবে শাকসবজি ফলমূল:
গরমের দিনে চর্বিযুক্ত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা ভালো। চর্বি জাতীয় খাবার শরীর আরো উত্তাপ লাভ করবে, ঘাম ও অস্বস্তি দুই-ই বাড়বে। চবির্র সঙ্গে অতিমাত্রায় চিনিযুক্ত খাবারও এড়িয়ে চলা স্বস্তিদায়ক। এ সময় নিয়মিত খাবারের তালিকায় যোগ করতে হবে ফলমূল ও শাকসবজি।
সূযের্র পোড়া এড়াতে সানস্ক্রিন
সূযের্র দাবদাহ থেকে ত্বককে রক্ষা করার জন্য শরীরের উন্মুক্ত অংশে সানস্ক্রিন ক্রিম মাখা যেতে পারে। সানস্ক্রিন প্রতি তিন ঘণ্টা অন্তর মাখতে হয়। বাজারে বিভিন্ন ধরনের সানস্ক্রিন বা সানব্লকার ক্রিম পাওয়া যায়। আমাদের দেশের জন্য এসপিএফ-১৫ শক্তিসম্পন্ন সানব্লকারই যথেষ্ট বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। গরমে অনেকেরই ত্বক লালাভ হয়ে ওঠে। ত্বকে চাকা চাকা র্যাশও ওঠে অনেকের। এই র্যাশগুলো খুব চুলকায়। এই ধরনের র্যাশ ঠাণ্ডা পরিবেশে অর্থাৎ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে থাকলে কমে যায় বা চলে যায়। অবস্থাটা এ রকম হলে বুঝতে হবে গরমে ত্বকের অতিসংবেদনশীলতার জন্য এমনটি হচ্ছে।
ALT TIP
*এই গরমে সুস্থ থাকার একটি প্রধান উপায় হচ্ছে সঠিক পোশাক নির্বাচন। আর এই সময় সবচেয়ে উপকারী পোষাক হচ্ছে সূতি কাপড়ের তৈরি পোশাক। কারন সারাদিন বাইরে থাকার ফলে শরীরে যে ঘাম হয় তা সূতি খাপড় খুব সহজেই শুষে নিতে পারে। এছাড়া সূতির পাশাপাশি ধূপিয়ান, লিলেন, টাইডাই ও কটনও নির্বাচন করতে পারে। কাতান, টিস্যু, জর্জেট এই ধরনের কাপড় যথা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। এছাড়া যারা বাইরে যাওয়ার সময় শাড়ি পরে থাকেন তারা সূতি, খাদি কাপড় নির্বাচন করতে পারেন। আজকাল সূতি কাপড়ের উপর অনেক ধরনের হালকা ডিজাইনের নকশা দেখা যায়। এসব পোশাকও সবার গায়ে খুব ভালো মানিয়ে যায়। এছাড়া রঙ নির্বাচনের খেত্রেও অনেক সতর্ক থাকা উচিত। এ সময় উজ্জ্বল রঙের পোষাক না পরাই ভালো। হালকা নীল, ধূসর, বালামী, হালকা গোলাপী, সাদা, মেজেন্টা এই ধরনের রঙ বেশী ভালো হয়। ছেলেদের ক্ষেত্রে টি শার্ট, থ্রী কোয়ার্টার প্যান্ট অথবা সূতির চেক শার্ট বেছে নিতে পারেন। এই ধরনের পোষাক সব যায়গায় ব্যাবহারের জন্য খুবই মানানসই হয়।
*এই সময় শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পরিমানে পানি শরীর থেকে বের হয়ে যায়। ফলে শরীরে পানিশূন্যতা ও বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়ে থাকে। তাই এই সময় সুস্থ থাকতে চাইলে প্রচুর পরিমানে পানি পান করুন। প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করুন। এছাড়া পানির সাথে সাথে বিভিন্ন ফলের জুস যেমন আম, তরমুজ, আখের রস, ডাবের পানি পান করুন। এ সময় বাড়িতে স্যালাইন অথবা গ্লুকোজ রাখুন। কারণ এগুলো শরীরে পানিশূন্যতা কমিয়ে শরীরে লবনের পরিমান ঠিক রাখতে সাহায্য করে। তবে রাস্তার পাশে অস্বাস্থকর পানীয় থেকে সাবধান থাকুন। কারন এগুলো পানে শরীর সুস্থ থাকার পরিবর্তে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
*এই সময় সচরাচর ভারী খাবার নয়া খাওয়াই ভালো। এছাড়া অতিরিক্ত তেল যুক্ত খাবারও এই সময় এড়িয়ে চলা উচিত। কারন ভারী খাবার খেলে এই সময় অতিরিক্ত গরম লাগবে এবং শরীর খারাপ হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে বিকালের নাস্তায় হালকা ফলমূল ও ফলের রস খেতে পারেন। এতে শরীর সুস্থ থাকবে।
*গরমের সময় সবসময় খোলামেলা জুতা পরা উচিত। এতে শরীর ঠান্ডা থাকে। এ সময় কখনো মোজা পরা উচিত নয়। এতে পায়ে বাতাস চলাচল করতে পারে নয়া এবং শরীর গরম থাকে। প্রতিদিন ব্যাবহারের জন্য খোলামেলা স্যান্ডের ব্যাবহার করতে পারেন।
No comments:
Post a Comment